ব্যাপক সমালোচনার মুখে বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে নিয়ে করা মন্তব্য পাল্টে ফেলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া। এবার তিনি হৃদয় মণ্ডলকে ফাঁসানো হয়েছে মন্তব্য করে তার মুক্তির দাবি করেছেন।
বলেছেন, প্রথমে বিষয়টা বুঝতে পারেননি তিনি। তবে বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বক্তব্যটা দেখার পর বুঝতে পেরেছেন তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার শিক্ষক সমিতির এই নেতা নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘আমাদের ৯০ শতাংশ মানুষ যেহেতু মুসলিম, সেখানে ধর্ম নিয়ে কন্ট্রাডিকটরি বক্তব্যটা দেয়া কোনোভাবেই সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি।’
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে কারাগারে পাঠানো মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত ও বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের মুক্তির দাবিতে শুক্রবারও সোচ্চার ছিল বিভিন্ন সংগঠন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির প্যাডে এক বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।
সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রহমতুল্লাহ ও সাধারণ সম্পদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘শিক্ষকের শিক্ষাদানের স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। অন্যথায় শিক্ষকের পক্ষে স্বাধীনভাবে শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
এক দিনের ব্যবধানে এমন বিপরীতমুখী বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নিজামুল হক ভুঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমি বিষয়টা বুঝতে পারিনি। প্রথমে আমি এই শিক্ষকের বক্তব্যটা পাইনি। এরপর রাতে বক্তব্যটা দেখার পর বিশ্লেষণ করলাম যে উনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ফাঁসানো হয়েছে।’
হৃদয় মণ্ডলের মুক্তি চেয়ে শিক্ষক সমিতির দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, পরিকল্পিতভাবে ‘ধর্ম অবমাননার দায়ে’ ফাঁসিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
- আরও পড়ুন: ‘সত্য বলায় গ্রেপ্তার কেন?’
হৃদয় মণ্ডলের সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বিজ্ঞানের ক্লাসে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ধর্মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল ধর্মকে ‘বিশ্বাস’ আর বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। শিক্ষকের এ বক্তব্য গোপনে রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়। ধারণা করা যায়, কোনো মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ কাজে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল একুশ বছর ধরে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। এ ধরনের প্রবীণ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মাধ্যমে মামলা করানো হয়, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রতীয়মান হয়। এ ছাড়া তড়িঘড়ি করে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করাটাও রহস্যজনক।
গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষকের জামিনের শুনানির সময় ‘এখন জামিন দিলে জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে’ বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটিও উদ্বেগজনক। আর যে কোনো নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিককালে ধর্ম নিয়ে একশ্রেণির মানুষের তৎপরতাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে ঘোলা জলে মাছ শিকারের জন্য সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে একটি মহল অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এ ঘটনা তারই অংশ বলে আমরা মনে করি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রহমতুল্লাহ গত বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে আমি জানিই না। যে বিষয় সম্পর্কে আমি জানি না, সে বিষয়ে আমি মন্তব্য করব না।’
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়াও বললেন একই কথা। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি তো আমি শুনিনি। আমি মাত্রই শুনলাম। কবে ঘটেছে এ ঘটনা?’